জোবায়ের আল মাহমুদ
16640979_1376146482458620_5915655336749580652_n
ই সলামের হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধকে আধুনিক সময়ে নতুনভাবে আবার ফিরিয়ে আনার জন্যে দিনরাত সাধনা করে যাচ্ছেন ড. জাসের আওদা। তিনি একাধারে একজন বিশ্ব বিখ্যাত বক্তা, লেখক, চিন্তাবিদ, গবেষক, দার্শনিক, মুফতি ও কোর’আনে হাফেজ। আরবি, ইংরেজি ও ফরাসী ভাষায় তিনি বক্তৃতা করেন এবং লেখালেখি করেন। বর্তমানে লন্ডনের ইসলামি শরীয়া ও গবেষণা মূলক একটি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক হিসেবে এবং সাউথ আফ্রিকার ‘আন্তর্জাতিক পিস কলেজে’ শরীয়া বিভাগের প্রধান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়াও তিনি কানাডা ও ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কর্মরত আছেন।
ড. জাসের আওদা মিশরের কায়রোতে, ১৯৬৬ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। শিশু বয়সেই তিনি সম্পূর্ণ কোর’আন মুখস্থ করেন। এরপর মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি হাদিস ও ফিকাহ অধ্যয়ন করেন। মিশরে পড়াশুনা শেষ করে তিনি উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্যে গমন করেন। এবং যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত ‘ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে ‘ইসলামি আইনের দর্শন’ বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। এখানেই তাঁর পড়াশুনা শেষ হয়ে যায়নি। তিনি আরেকটি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করার জন্যে কানাডা গমন করেন এবং কানাডার ‘ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে ‘পদ্ধতিগত গবেষণা’ বিষয়ে আরেকটি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবনের শুরুতেই তিনি ‘Inteational Union of Muslim Scholars’ নামক আন্তর্জাতিক মুসলিম স্কলারদের এই সংস্থায় বোর্ড মেম্বর হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর তিনি ইউরোপের ‘ফতোয়া ও গবেষণা কাউন্সিলের’ সদস্য হিসেবে মনোনীত হন এবং কিছু দিন লন্ডনের ‘মাকাসিদে শরীয়া সেন্টারে’ দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও কাতারের ‘Center for Islamic Ethics’এবং ভারতের ইসলামি শরীয়া ও ফিকাহ একাডেমিতে তিনি কাজ করছেন দীর্ঘ দিন থেকে। কর্মজীবনে তিনি অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তার মধ্যে মিশরের ‘আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়’, কাতারের ‘ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ’ এবং ‘অ্যামেরিকান ইউনিভার্সিটি অব শারজা’ উল্লেখযোগ্য।
পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও গবেষণা মূলক সংস্থায় তিনি প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন। তাঁর গবেষণার বিষয় হলো আধ্যাত্মিকতা, নৈতিকতা, ইসলামি আইন এবং মাকাসিদে শরীয়া। এসব বিষয়ে তিনি ২৫টিরও অধিক বই এবং অসংখ্য প্রবন্ধ লিখেছেন। তাঁর লেখা বই ও প্রবন্ধগুলো ইংরেজি ও বাংলা ভাষাসহ পৃথিবীর ২৫টিরও অধিক ভাষায় অনুদিত হয়েছে। এ ছাড়াও, বিশ্ব বিখ্যাত সুফী ইবনে আতা এবং ইসলামি চিন্তাবিদ মোহাম্মদ আল গজালির বেশকিছু বই তিনি আরবি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। ‘জাসের আওদা’ নামক তাঁর ওয়েবসাইটে (www.jasserauda.net) এই বইগুলো এবং প্রবন্ধগুলো বিনামূল্যে পড়ার ও ডাউন-লোড করার ব্যবস্থা রয়েছে। তাঁর ইউটিউব চ্যানেলেও প্রায় ৩০০টির মতো বিভিন্ন ইসলামি প্রশিক্ষণ কোর্স ও বক্তৃতার ভিডিও রয়েছে।
বর্তমান সময়ের তরুণ চিন্তাবিদেরা ড. জাসের আওদাকে তাদের আদর্শ শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করেন। কারণ, আধুনিক এই যুগে মুসলিম তরুণদের ইসলাম সম্পর্কে যেসব প্রশ্ন আছে, তা কোর’আন, হাদিস, ফিকাহ ও যুক্তি-বুদ্ধির মাধ্যমে সঠিক ও বোধগম্য উপায়ে সমাধান দিয়ে যাচ্ছেন ড. জাসের আওদা। বর্তমানে ইসলামি শরীয়ার কথা শুনলেই যখন অমুসলিমরা ভয় পায় এবং তারা মনে করে যে, শরীয়া মানে হাত কাটা; তখন ড. জাসের আওদা মুসলিম ও অমুসলিম নির্বিশেষ সবাইকে এ কথা বুঝাতে সমর্থ হয়েছেন যে, শরীয়া মানে ন্যায় ও মানব কল্যাণ; শরীয়া মানে হাত কাটা নয়। মানবতার কল্যাণ ও উন্নতির জন্যেই শরীয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ইসলামের বিভিন্ন নিয়ম-কানুনকে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করার কারণে ড. জাসের আওদা কেবল মুসলিমদের মাঝে নয়, অমুসলিমদের মাঝেও আজ খুবই জনপ্রিয়।
lলেখক : তুরস্কের উলুদা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স তাফসীর বিভাগে অধ্যয়নরত